মাদারীপুরে অবৈধ বালু ব্যবসা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: দুই সহোদর নিহত
মাদারীপুর সদর উপজেলায় অবৈধ বালু ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই সহোদরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরেক ভাইসহ অন্তত ৮ জন। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
শনিবার সকালে সদর উপজেলার মধ্য খোয়াজপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের মতে, আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান খান ও মতিন মোল্লা, অন্যদিকে ছিলেন নিহত সাইফুল সরদার ও তার ভাইয়েরা।
সকাল ১০টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়, যা দ্রুতই সংঘর্ষে রূপ নেয়। ধারালো অস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ একে অপরের উপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে সাইফুল সরদার (২৭) ও তার বড় ভাই আতাবুর সরদার (৪৫) গুরুতর আহত হন। তারা স্থানীয় একটি মসজিদে আশ্রয় নিলেও প্রতিপক্ষ সেখানে গিয়ে তাদের কুপিয়ে হত্যা করে। আহতদের মধ্যে অলিল সরদারসহ আরও কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহতদের পরিবারে শোকের মাতম
নিহত দুই ভাইয়ের মা সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা শুধু নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে চেয়েছিল, কিন্তু শাহজাহান ও মতিন মোল্লার লোকজন তাদের বালু ব্যবসা করতে দিচ্ছিল না। এই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।”
অগ্নিসংযোগ ও ভয়াবহতা
সংঘর্ষের সময় হামলাকারীরা নিহতদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, ফলে ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, স্থানীয়রা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকে। সংঘর্ষের পর পরই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশের ভূমিকা ও গ্রেপ্তার
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা আফজাল মাতুব্বর বলেন, “এই বালু ব্যবসা আমাদের এলাকায় শান্তি নষ্ট করছে। ক্ষমতাশালীরা নিজেদের স্বার্থে সাধারণ মানুষের জীবন শেষ করে দিচ্ছে। প্রশাসন যদি আগে থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নিত, তাহলে এত বড় ক্ষতি হতো না।”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয়
এ ধরনের সংঘর্ষ রোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।
উপসংহার
মাদারীপুরের এই সংঘর্ষ আবারও প্রমাণ করল, কীভাবে অবৈধ ব্যবসা ও ক্ষমতার লড়াই সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। নিহতদের পরিবারে এখন শুধুই শোকের মাতম। তারা ন্যায়বিচার চায়, তারা নিরাপত্তা চায়। প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপই পারে এই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে।


Post a Comment