পল্টনে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল ছত্রভঙ্গ, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার

ঢাকার পল্টন মোড়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এর ফলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন অলিগলিতে আশ্রয় নেয়। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।


আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর হিযবুত তাহ্‌রীরের ব্যানার নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ বাধা দেওয়ার পর মিছিলটি পল্টন মোড় পেরিয়ে বিজয়নগর মোড়ের দিকে চলে যায়। তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটাও করে, যার ফলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং অংশগ্রহণকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তারা আবার সংগঠিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে আসতে থাকে। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লে মিছিলটি আবারও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে পল্টন ও আশপাশের এলাকা থেকে পুলিশ বিভিন্ন অলিগলিতে অভিযান চালায় এবং হিযবুত তাহ্‌রীরের সদস্য সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম সাংবাদিকদের জানান, হিযবুত তাহ্‌রীরের সদস্যরা অলিগলিতে অবস্থান নিয়েছে এবং পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এর আগে, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের 'মার্চ ফর খিলাফত' কর্মসূচির প্রেক্ষিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে এবং আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন।


আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। পল্টন মোড়ে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো, এবং সেখানে সাঁজোয়া যান (এপিসি), জলকামান ও প্রিজন ভ্যান দেখা যায়। বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টন মোড়মুখী সড়কে পুলিশের আরও একটি প্রিজন ভ্যান ছিল।

হিযবুত তাহ্‌রীরের 'মার্চ ফর খিলাফত' কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আগেই সতর্কতা জানিয়েছিল। ডিএমপি বলেছে, তাদের কোনো কার্যক্রম দেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ ধরনের কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি উত্তরা থেকে হিযবুত তাহ্‌রীরের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মনিরুল ইসলাম (৪০), মোহতাসিন বিল্লাহ (৪০) এবং মাহমুদুল হাসান (২১)। ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বায়তুল মোকাররম এলাকায় 'মার্চ ফর খিলাফত' কর্মসূচির গোপন পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে।


এদিকে, পুলিশ হিযবুত তাহ্‌রীরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ডিএমপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংগঠনটির কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া, তাদের সকল কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯-এর আওতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।

পুলিশের তৎপরতার মধ্যে পল্টন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বেশ কিছু সাঁজোয়া যান এবং জলকামান নিয়ে পুলিশের উপস্থিতি ছিল, যা তাদের প্রস্তুতির প্রতিফলন ছিল। র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা সড়কের বিভিন্ন এলাকা ও অলিগলিতে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালিয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।

হিযবুত তাহ্‌রীরের কর্মকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্কতা এবং কঠোর অবস্থান দেখে স্থানীয় জনগণও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। তাদের অভিযোগ, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য এই ধরনের নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। এছাড়া, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং তাদের আইনি কার্যক্রমের মাধ্যমে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হবে।

এই পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে যদি কোনো নতুন ধরনের সহিংসতার সৃষ্টি হয়, তাই নিরাপত্তা বাহিনী জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছে যাতে একযোগে পরিস্থিতি শান্ত রাখা সম্ভব হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post